• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • ঐতিহাসিক জয়ে বিভাজিত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ 

     admin 
    25th Apr 2022 5:23 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক :পাঁচ বছর আগে সব জল্পনা-কল্পনা ওলটপালট করে দিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হন রাজনীতিতে নবাগত ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এরপর বৈশ্বিক রাজনীতিতে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বনে যান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হয়ে কঠিন-কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে তাকে। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের শত্রুতা বন্ধেও তিনি জোর চেষ্টা চালান।

    প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ল্য পেনকে হারিয়ে তিনি আরেক মেয়াদে জয়ী হয়েছেন। প্রথমবারের মতো পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার মানুষের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলেন।

    হ্যাঁ, এর আগেও দুই প্রেসিডেন্ট এলিসি প্রাসাদে দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরেছিলেন। ১৯৮৮ সালে ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ ও ২০০২ সালে জ্যাক শিরাক। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ী হওয়ার আগে তারা ছিলেন বিরোধী দলে।

    দুটো ঘটনার সময়েই মধ্যবর্তী নির্বাচনের কারণে সত্যিকারের সরকার ছিল প্রেসিডেন্টের প্রতিপক্ষের হাতে। যদিও ক্ষমতায় থাকলেও মিতেরঁ ও শিরাক ছিলেন রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশূন্য, যা বিরূপ পরিস্থিতিতেও তাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ভোটে জয়ী হতে একটি অনুকূল পরিবেশ খুঁজে পেয়েছিলেন তারা।

    ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলের জয় নিয়ে বলতে গেলে মনে রাখতে হবে, শুরুতে তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত ছিলেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির হাত থেকে ফরাসিদের স্বাধীন করতে নেতৃত্ব দেন এই সেনা কর্মকর্তা।

    আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে জনগণের আস্থা অর্জনে সফল হন ম্যাক্রোঁ। পুরো শাসনকালে ফরাসি পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রতিটি দিক তার মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। প্রথম মেয়াদে ৪৪ বছর বয়সী এই ফরাসি রাজনীতিবিদকে অনবরত কূটনৈতিক তৎপরতায় লেগে থাকতে দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনি নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন।

    ফের জয়ী হওয়ার পর ইউক্রেন সংকট মোকাবিলার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যাবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ম্যাক্রোঁ নিজেকে এমন এক প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যার আশা-ভরসার স্থল ইউরোপ। তার যুক্তি—বৈশ্বিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী হতে ফ্রান্সের পথ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

    সরকারের সঙ্গে ফরাসিদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে একটি অদ্ভুত রীতি দেখা গেছে। প্রথমে হইহুল্লোড় করে নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে পরে প্রথম সুযোগেই তাদের ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। সে হিসেবে এ জয় ম্যাক্রোঁর জন্য বড় সফলতা। ফরাসিরা তাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেনি, তার জ্বলন্ত প্রমাণ এই নির্বাচন।

    দুটি পদ্ধতিতে তিনি মানুষকে জয় করেন। যার প্রথমটি আগামী পাঁচ বছরের জন্য ভালো কিছুর আভাসই দিচ্ছে। দ্বিতীয়টি অবশ্য হালকা নেতিবাচক। নির্বাচনের ফল বলছে, সামাজিক মাধ্যমের ব্যঙ্গচিত্রের আড়ালে ম্যাক্রোঁবিরোধী ক্ষোভ লুকিয়ে আছে। ম্যাক্রোঁকে তারা ধনীদের প্রেসিডেন্ট বলে ডাকেন। তাকে উদ্ধত ও সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরের বলে সম্বোধন করেন। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখতে পারেননি বলেও নিন্দুকেরা দাবি করছেন।

    কিন্তু লাখো সাধারণ ফরাসি, যারা তাকে একেবারে খারাপ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাবছেন না, তারা মনে করেন, বেকারত্ব কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। ম্যাক্রোঁর ব্যাপক সংস্কার তৎপরতার কারণেই তারা এমনটি মনে করছেন। করোনা মহামারি তিনি দক্ষ হাতে মোকাবিলা করেছেন। বৈশ্বিক মঞ্চে দেশকে তুলে ধরেন দক্ষতার সঙ্গে।

    তিনি অবসরের বয়স বাড়িয়ে দিলেও সাধারণ মানুষ তাতে দ্বিমত করেনি। ফ্রান্সের জটিল অবসর ভাতা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেন ম্যাক্রোঁ। এতে অবসর নেওয়ার বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার কথা রয়েছে। আগের নির্বাচনেও তিনি একই অঙ্গীকার করেন।

    একটা বড়সংখ্যক ফরাসির উপলব্ধি—তিনিই নেতা, যিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দক্ষতা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন। এলিসি প্রাসাদে এমন কেউ আছেন ভেবে তারা খুশি। ম্যাক্রোঁর সেই ব্যক্তিত্ব আছে। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সোজাসাপ্টা কথা বলতে পারেন। যদিও তার চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে।

    ফরাসিরা মনে করেন, ম্যাক্রোঁর অধীন থাকা ফ্রান্সই শুধু ইউরোপের নেতৃত্ব দিতে পারে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিপুল সামরিক ও অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্যও এ ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। কট্টরপন্থি মেরিন ল্য পেন নিজেকে সেই অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেননি। ম্যাক্রোঁর চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলেন তিনি।

    ফ্রান্সের বহু মানুষ ম্যাক্রোঁকে খুব একটা পছন্দ করেন না; কিন্তু তাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় নিজেকে অনেক আলাদা প্রমাণ করতে পেরেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এতে বিরোধীদের কাছ থেকেও সমীহ আদায় করে নিয়েছেন।

    যদিও ম্যাক্রোঁর রাজনৈতিক পদ্ধতির দ্বিতীয় দিকটি খুবই অনিশ্চিত ও সমস্যাযুক্ত। যে কারণে শুরুতেই তাকে নিয়ে সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। বছর পাঁচেক আগে ইউরোপীয় দেশটির আধুনিক রাজনীতির ইতিহাসে চমৎকার একটি ঝুঁকি নিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ। সফলও হয়েছেন। মাঝখানে দাঁড়িয়ে কনজারভেটিভ ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের পুরোনো জুড়ি তিনি ধ্বংস করে দেন। শার্ল দ্য গলের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতাকে তিনি ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন।

    এলিসি প্রাসাদ থেকে একটি অতি ব্যক্তিতান্ত্রিক ও কেন্দ্রভূত সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাক্রোঁ। বিরোধীরা চরম ডান ও বামের দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু তারা ঝুঁকি তৈরি করতে পারবে না বলেই ম্যাক্রোঁর আস্থা ছিল। এখন পর্যন্ত তার অবস্থানই সঠিক এবং এবারের নির্বাচন ভালোভাবেই তা প্রমাণিত।

    কিন্তু এ নির্বাচন ভিন্ন কিছুও তুলে ধরেছে। আরও মানুষ এখন চরমপন্থাকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখছে। ম্যাক্রোঁর সফল বিপ্লবের কারণেই এমনটি হয়েছে। লোকজন তার বিরোধিতাও করতে চায়, তবে তাদের যাওয়ার জায়গা কোথাও নেই। অর্থাৎ, তারা ম্যাক্রোঁর মতো কাউকে পাচ্ছে না, যাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রায় দিতে পারে।

    এমন বহু ভোটার আছেন, যারা পুনর্নির্বাচিত নতুন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চান। তাদের অনেকে অতি বামপন্থি প্রার্থী জঁ-ল্যুক মেলঁশোঁকে ভোট দিয়েছেন। তাদের আশা, পার্লামেন্টারি নির্বাচনে তারা এটি করতে পারবেন। আগামী জুনে সেই ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তারা ভাবছেন, পার্লামেন্টারি নির্বাচনে বড় জয় তুলে আনতে পারবেন। সেপ্টেম্বরে তারা রাস্তায় নেমে ম্যাক্রোঁবিরোধী বিক্ষোভ করার স্বপ্ন দেখছেন। বিশেষ করে ওই সময়ে তিনি যদি নতুন দফায় সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন।

    ২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়নের পর সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। আন্দোলনকারীদের দমনপীড়নে তার কর্তৃত্ববাদী আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন সমালোচকরা। কিন্তু তারপরও এবারের নির্বাচনে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

    দ্বিতীয় মেয়াদে নতুন ধরনের সরকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। তিনি এখন অনেক বেশি শ্রোতা হবেন। মানুষের কথা বেশি শুনবেন। কারণ, তার জানা আছে, এখানে মানুষ ক্ষত বয়ে চলেছে, যা সারিয়ে তুলতে হবে। এর আগেও তার মুখ থেকে এমন বহু অঙ্গীকারের ফুলঝুরি শোনা গেছে। কাজেই বহু মানুষে আছে, যারা তাকে আরও বিশ্বাস করতে পারছে না।

    রাজনৈতিক ভাষ্যকার নাতাশা পোলোনি বলেন, ফ্রান্সে দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তি আছে—এ নির্বাচনে শুধু তা স্পষ্টই হয়ে ওঠেনি, বিরোধী শিবিরও যে বৈধ নয়, লোকজনের মধ্যে সেই ধারণাও তৈরি হয়েছে। বিরোধী দল নিয়ে নিজেদের খেদও তারা প্রকাশ করছে।

    তিনি বলেন, অতীতের নির্বাচন শেষ হতো কাউকে সব ফরাসির প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে। কিন্তু ভবিষ্যতে সেই ঘটনা আরও ঘটবে বলে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

    যদিও বিজয়ীর বক্তৃতায় সবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ম্যাক্রোঁ। দ্বিতীয় মেয়াদ শুধু প্রথমটির ধারাবাহিকতাই হবে না, ফরাসিদের চলমান সংকটগুলো দূর করবেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

    Array
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৪:২৭
    জোহর ১২:০৫
    আসর ৪:২৯
    মাগরিব ৬:২০
    ইশা ৭:৩৫
    সূর্যাস্ত: ৬:২০ সূর্যোদয় : ৫:৪২

    আর্কাইভ

    April 2022
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    252627282930